ছোটবেলায় শীতকালটা খুব মজা লাগতো, রাতের বেলা লেপের উষ্ণতায় ঘুমানোর জন্য। সকালে ৯ টাকা/ ১০ টা পর্যন্ত লেপের ভিতরে থাকতে না পারলে, খুব রাগ লাগতো 'ধূর'! ৭ সকালে কত্ত ভারী ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে হবে! তবে, শীতের কুয়াশা দেখতে, আকাশটা দেখতে অনেক ভাল লাগতো। নিজে নিজেই উপভোগ করতাম আকাশটা, কাউকে কিছু বলতাম না, শীতের এই ইমেজটাকে ভাল লাগার কথা। আরেকটা সময়ে এই ভাল লাগার অনুভূতিটা হতো, যখন বৃষ্টির সিজেনে বৃষ্টি হত, তখন। তবে অতীত মৃত, বর্তমানটা জীবন্ত। ছোটবেলাটা আসবেনা- গতকালকের মত।
শীতকালটা এখন অদ্ভুত জীবন্মৃত একটা অনুভূতি তৈরী করে। শীতের বাতাসটা গায়ে লাগলে এখন অসহ্য লাগে, গায়ে যতই গরম কাপড় থাকুক।
যাদের চাল নাই, চুলা নাই, তা যে কারণেই হোক, শীতের দেড়/দুই মাস কিভাবে কাটে, তারাই জানে, এবং তারা জানে, শীত পার হলে দু'মাস পরে, অসহ্য রাতগুলো কেটে যাবে। বাহ্যিক জগতে ষড়ঋতুর শীত, গায়ে চাদর, অথবা পিঠা অথবা কুয়াশার সৃষ্টি করে হয়তো। দশদশার বুকে ষড়বর্গের
অস্তিত্বগুলোও 'জীবন' নামক জিনিসটাকে রংধনুর মত জমকালো করে তোলে। এই শীতের আমেজে, যতক্ষন দিন থাকে, ততক্ষন ভাল লাগে, রোদের মধ্যে মিশে থাকতে পারি। রাতের আকাশটা খুবই অসহ্য লাগে, তখন আর রোদকে পাওয়া যায় না। তখন মনে হয় যেন সূর্য্যের দেশে চলে যাই।
২০০১ থেকে ২০১১ অক্টোবর পর্যন্ত যে বাড়ীতে 'আমরা' ছিলাম, তার চারদিক ছিলো বন্ধ, আর আমার রুমে তো ভেন্টিলেটর ও ছিলনা। যদিও সেই বন্ধ করে খোলামেলা বাতাস ছিলনা, তবুও সেখানে আকাশটাকে দেখতে হয় নাই, আমার জন্য একরকম ভালই ছিলো। এখন যেখানে 'আমি' আছি, সেখানে রুমের দরজা-জানালা খুললেই ঠান্ডা, খোলা বাতাস। অঙ্েিজনের জন্য ভাল, দিনের বেলা খুবই ভাল, এর মাঝে চলে আসছে শীতকাল। রাতে প্রায়ই দুইটা-তিনটার দিকে ঘুম ভাঙ্গে। তখন উঠে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াই। মনে হয় যেন আকাশটাকে চুরি করে দেখতেছি। অল্প একটু দেখেই তাড়াতাড়ি আবার পাশের ঘরে চলে যাই, চা বানানোর জন্য।
এই ঠান্ডার মধ্যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে, চা-সিগারেটের পরশটা অসহ্যতার মাঝে কেমন যেন একটা স্পর্শ দিয়ে যায়, মুখের ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। আকাশের তারাগুলো জ্বলজ্বল করতে থাকে, জ্বলজ্বল করেই তাকিয়ে দেখি। মজার ব্যাপার,এই শীতেও, পাশের বাড়ীতে দেখি এ.সি চলতে থাকে রাত ভরে। বুঝতেই পারিনা, এই ঠান্ডায় সেখানে এসি টা চললো কিভাবে? তারমানে সেখানে প্রচন্ড গরম! আর, আমার ঘরের উপরের অংশে / সিলিং-এ টিনের চাল থাকায়, ঘর থাকে বেশ ঠান্ডা।
ঋতু অনুযায়ী এখন শীতকাল চললেও, আমার সর্বাঙ্গের শীতার্ত অনুভূতিটা, প্রায় সারা বছরই থাকে বহমান।
যখনই ঘুমাতে চাই, তখনই উষ্ণতার তৃষ্ণায় গায়ে র্যাপার জড়াতে হয়, মাথার উপরে দিতে হয় আরেকটা বালিশ, আর মাথার নীচে তো থাকছেই। এর পর আপাদমস্তক ঢেকে কুম্বকর্নেল ঘুম আর আমার রাশিটাও কুম্ভরাশি, ফলে শীতের সময় তো মারাত্মক হয় অবস্থা আমার জন্য। ঐ খ্যাতাটা গায়ে জড়াবার আগে, চারটা ফুলহাতা সোয়েটার, গেঞ্জি, মাথায় মাঙ্কিক্যাপ, গলায় ঊলের মাফলার, হাতে ঊলের গ্লাভস, পায়ে ঊলের মুজা, এরপর লুঙ্গীর নীচে পড়তে হয় ফুলপ্যান্ট। আর সবার প্রথমে, গায়ে মেখে নিই অলিভঅয়েল। তা- না হলে প্রচন্ড শীতে, দেহ কম্প হতে থাকে। শীতের সময় রাস্তায়
রাস্তায় দেখি ব্যাটারা ফেরী করে ভাবাপিঠা ব্যাচে। ভাবাপিঠা আমার সবচেয়ে প্রিয় পিঠা। এছাড়াও পাটিশাপ-টা, ভিজাইন্না পিঠা, কুলি পিঠা এগুলিও খুব মজা লাগে।
কিন্তু রাস্তা থেকে কিনে খেতে গেলে, ঐ পাটিশাপটাই একটু ভাল লাগে। ভিজাইন্নাপিঠা তো খাওয়াই যাবেনা। চিতই পিঠা যেটা বানায়, সেটা মোটামুটি ভর্তা দিয়ে / কাশন্দ দিয়ে খাওয়া যায়, কিন্তু ঐ চিতইকে যখন 'দুধে - গুড়ে' বিজায়, তখন মুখের কাছেই নেওয়া যায় না। ঐ দুধের মধ্যে কেমন জানি স্পেশাল গন্ধ থাকে, আর ধুধে গুড়ের ফ্লেবার দেয়ার জন্য ব্যাটারা যে কী দেয়, তা সেই 'মামু'রাই জানে। ওরকম, ভাবাপিঠার মধ্যে যে নারকেল দেয়, সেটা খেয়ে হয় পেটব্যাথা, তেলের পিঠা খেলে বুক জ্বলে।
তাররেও দেখি দেদারসে আমাদের মত ইয়াং- পোলাপানরা রাস্তায় আড্ডা মারে আর সেই পিঠাই খায়। তখন ওদের দেখাদেখি আমরাও লোভ লাগে, আমিও খাই। কিন্তু গত বছরের আগের বছর আমার বাড়ীর আশে পাশে ধানমন্ডি-জিগাতলা বা মোহাম্মদপুরের রাস্তায় ১০ টাকা দিয়ে যে ভাবাপিঠা খেয়েছিলাম, তা আর এখন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, তখন যেটা ৫ টাকায় পাওয়া গিয়েছিল, এখন সেটা খাওয়া যাচ্ছে ১০ টাকায় দারুন টঢ়মৎধফব.
আমার কালো হয়ে যাওয়া লাল ঠোট, শীত এলে ফেটে যায়। তখন লিপজেল লাগাই। তা-না হলে ঠোট জ্বলে। তবে শীত এলে সবসময়ই কাজকর্ম করতে কেমন জানি অলসতা লাগে, রাগ লাগে। কাজটা করতেও হবে, আবার বিছানা থেকে উঠতেও ইচ্ছা হয় না। মনে হয়, কেউ যদি কাজগুলো করে দিতো, ভাল হইতো।
আমি যখন আমার এই শীতের গল্প লিখছি (৩-১২-২০১১ রাত ৩টা), তখন মনে হয় হাজার হাজার মশা একযোগে আমার পায়ে, আর কানে সমানে কামড়াচ্ছে। আরাম করে বসে বসে লিখতে না পেরে, তখন খুব ভাল দেখে একটা মশার কয়েল জ্বালালাম। আমি আবার একটা কয়েলকে ৪/৫ টুকরা করে একযোগে জ্বালাই। একদম সাথে সাথে মশা নাই। তখন মনে হলো, মশা মারার জন্য আগামী কালকে মশা মারার ব্যাট কিনতে হবে। মনে হয় এক্ষেত্রে, মশা মারার ব্যাট খুব কার্যকরী, টেষ্ট করতে হবে। শীতের সময় মনে হয়, মশারা সব মানুষের বাসায় থাকে। পিঁপড়া, মশা, মাছি, তেলাপোকা, ইঁদুর এদেরকে ডাইনোসরের মত নিমর্ূল করতে পারলে ভাল হতো।
আমাদের দেশে ১২ মাসের মধ্যে ২/২ ঙ্গ মাস, নির্ধারিত শীতমাস। এই দুইমাস ঘরের ভিতরে থেকে যে ঠান্ডা লাগে, বাইরেও ঠিক ঐ মুহুর্তে অনেক, অনেক মানুষ থাকে। যাদের গায়ে একটা পাতলা চাদরও থাকেনা। কিন্তু যার যার অবস্থা তার তার কাছে। তাই পরিবর্তনটা নিজের কাছে, যদি নিজের পরিবর্তনটা চাই।